my plesure
Tuesday, April 24, 2018
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করা খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ফরাসি গবেষকদের নতুন এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।সোডা, কেক, মিষ্টি পানীয়, ইন্সট্যান্ট নুডুলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, সসেজ, নাগেটস, মচমচে খাবার, বেকন, প্যাকেটজাত রুটির মত খাবারগুলোকে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার হিসাবে গণ্য করেছেন গবেষকরা।
১০৫,০০০ মানুষের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ ধরনের খাবার খাওয়া ১০ শতাংশ বাড়ালেও ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১২ শতাংশ বেড়ে যায়।
প্যারিসের সোরবোন এবং সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির গবেষকদল বলছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১১ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে মানুষের ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং কলেস্টরেলও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আর এ সবই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে নতুন গবেষণার ফল প্রকাশ পেয়েছে। এ গবেষণায় গবেষকরা গড়ে ৪৩ বছর বয়সী ১০৪,৯৮০ জন মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন। এদের ২২ শতাংশ পুরুষ এবং ৮৭ শতাংশই নারী।
খাদ্যাভ্যাস ছাড়াও বয়স এবং পারিবাকি ইতিহাসের মত ক্যান্সারের অন্যান্য ঝুঁকিগুলোও গবেষণায় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গড়ে ৫ বছর সময়ে তাদের ওপর গবেষণা চালানো হয়।
গবেষণার সময় গড়ে ১৮% মানুষের খাবার ছিল অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত। গড়ে প্রতি বছর ১০ হাজার জনের মধ্যে ৭৯ জনের ক্যান্সার দেখা গেছে। প্রক্রিয়াজাত খাবার ১০% বাড়ানোয় বছরে প্রতি ১০ হাজারে অতিরিক্ত ৯ জনের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আগামী কয়েক দশকে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাও যে বাড়তে পারে এ গবেষণা সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
তবে গবেষণার ফলের বিষয়য়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরো বড় পরিসরে গবেষণা চালানো প্রয়োজন বলেও তারা মত দিয়েছেন।
গবেষণায় ফল, শাক সবজি, চাল, পাস্তা, মাংস, মাছ, দুধ, ডিমের মত খাবার খাওয়ায় ক্ষেত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম পরিলক্ষিত হয়েছে।
তাছাড়া, কম প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন: টিনজাত শাকসবজি, পনীর, খোলা রুটি খাওয়ার সঙ্গেও ক্যান্সারের তেমন কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।===========================================================================
২০০৬ খ্রিস্টাব্দে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয় এবং স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিস্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ বাংলা শাসন করেছিল। এর ঠিক পরেই শশাঙ্ক নামের একজন স্থানীয় রাজা স্বল্প সময়ের জন্য এ এলাকার ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। প্রায় একশ বছরের অরাজকতার (যাকে মাৎসন্যায় পর্ব বলে অভিহিত করা হয়) শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজবংশ বাংলার অধিকাংশের অধিকারী হয়, এবং পরবর্তী চারশ বছর ধরে শাসন করে। এর পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। দ্বাদশ শতকে সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের প্রবর্তন ঘটে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভিযান এবং যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুসলিম শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ১২০৫-১২০৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজী নামের একজন তুর্কী বংশোদ্ভূত সেনাপতি রাজা লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের পতন ঘটান। ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসার আগে পর্যন্ত বাংলা স্থানীয় সুলতান ও ভূস্বামীদের হাতে শাসিত হয়। মোঘল বিজয়ের পর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপিত হয় এবং এর নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীর নগর।
শেখ মুজিবুর রহমান (ডান পাশ থেকে তৃতীয় জন) এবং মওলানা ভাসানী (ডান পাশ থেকে চতুর্থ জন) ১৯৫৩ সালেবাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে।[১৪] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রিটিশ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন একজন ভাইসরয় প্রশাসন পরিচালনা করতেন।[১৫] ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে বহুবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর মধ্যে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩০ লাখ লোক মারা যায়।[১৬]
১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলশ্রুতিতে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, যার রাজধানী ছিল ঢাকায়।[১৭] তবে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনর্বার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয়; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।[১৮] ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভূমিস্বত্ব সংস্কারের মাধ্যমে জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয়।[১৯] কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈরীতার প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়।[২০] পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসাবে আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে, এবং দলটি বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি ৬ দফা আন্দোলনের সূচনা ঘটে যার মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধিকার আদায়। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চাপিয়ে আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়; কিন্তু ঊনসত্তরের তুমুল গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সামরিক জান্তার পতন ঘটে এবং মুজিব মুক্তি পান।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। এ সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার অসহযোগিতা ও ঔদাসীন্য প্রকট হযে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে।[২১] মুজিবের সাথে গোলটেবিল বৈঠক সফল না-হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ গভীর রাতে মুজিবকে গ্রেপ্তার করেন এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে বাঙালিদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে।[২২] পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হামলাযজ্ঞে রাতারাতি বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।[২৩] সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় দালালদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। গণহত্যা থেকে নিস্তার পেতে প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। (LaPorte [২৪] , p. 103) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোট জীবনহানির সংখ্যার হিসাব কয়েক লাখ হতে শুরু করে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে।[২৫] [২৬] দুই থেকে চার লক্ষ নারী পাকিস্তানী সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁরা ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। এর প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমদ। এই সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিলে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ৯ মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে লড়াই করে। মুক্তি বাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের সহায়তায় ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে পরাভূত করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করেন। প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানী সেনা যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক হয়; যাদেরকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।[২৭]
শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধস্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।[১৬] ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে শুরুতে মুজিব সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশে বাকশাল নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তারিখে সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ও স্বীয় দলের কিছু রাজনীতিবিদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন।[২৮] পরবর্তী ৩ মাসে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার পরিসমাপ্তিতে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম সফরের সময় আরেকটি অভ্যুত্থানে নিহত হন।[২৮] অতঃপর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তাঁর পতন হয় এবং তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করলে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়।[২৯] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ ও ২০০১ হতে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দারিদ্র ও দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে তার অবস্থান সমুন্নত রেখেছে।
২০০১ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর নানা নাটকীয় পালা বদলের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ফখরুদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এই সরকার প্রায় দুই বৎসর ক্ষমতায় থাকে এবং সেনা সমর্থিত সরকার হিসাবে সমালোচিত হয়। তবে ফখরুদ্দিন সরকার ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন।
========================================================================================
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে।[৩১] বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও মহিলাদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তারচেয়ে বয়সে বড় সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি চালু হয় যা ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সংশোধনক্রমে সংবিধানে গৃহীত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্বে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতো। এ সময় সরকারি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।[৩১] ২০১১-এ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনপূর্ব নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আবার, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ১৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিদের অভিশংসন প্রথা চালু হয়। প্রধান বিচারপতিদের ইচ্ছে করলে সংসদ অভিশংসন করতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি এদেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর সীমিত ক্ষমতা রয়েছে; কেননা কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি "সরকার প্রধান" হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পদমর্যাদায় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টাবৃন্দ মন্ত্রী সভার বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রীর চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থায়ী সচিব। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ৪১ টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। বড় মন্ত্রণালয়, যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, একাধিক “বিভাগ”-এ বিভক্ত যা কার্যতঃ মন্ত্রণালয় বটে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমী প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। ২০১১-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫।, এর বাইরে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭৩ হাজার ৩২১, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১১ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ জন।[৩২]
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন ও আপীল ডিভিশন। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইন-কানুন অনেকটা প্রচলিত ব্রিটিশ আইনের আদলে প্রণীত; তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে।=====================================================
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬টি সংশোধনী আনা হয়েছে।[৩১] বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও মহিলাদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তারচেয়ে বয়সে বড় সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি চালু হয় যা ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সংশোধনক্রমে সংবিধানে গৃহীত হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্বে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হতো। এ সময় সরকারি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।[৩১] ২০১১-এ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনপূর্ব নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আবার, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ১৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিদের অভিশংসন প্রথা চালু হয়। প্রধান বিচারপতিদের ইচ্ছে করলে সংসদ অভিশংসন করতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি এদেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তাঁর সীমিত ক্ষমতা রয়েছে; কেননা কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি "সরকার প্রধান" হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রীসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পদমর্যাদায় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টাবৃন্দ মন্ত্রী সভার বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রীর চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থায়ী সচিব। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে ৪১ টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। বড় মন্ত্রণালয়, যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, একাধিক “বিভাগ”-এ বিভক্ত যা কার্যতঃ মন্ত্রণালয় বটে। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমী প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। ২০১১-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫।, এর বাইরে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭৩ হাজার ৩২১, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১১ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ জন।[৩২]
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন ও আপীল ডিভিশন। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইন-কানুন অনেকটা প্রচলিত ব্রিটিশ আইনের আদলে প্রণীত; তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে।
==============================‘তাহলে আপনিই শিহাব?’ নিজের নাম শুনে মাথা তুলে তাকালাম। দেখি, সুন্দর মুখের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। হাতে সাদা রঙের মুঠোফোন। তাতে লেগে আছে শরীরে মাখানো পারফিউমের মিষ্টি একটা গন্ধ। গন্ধ শুঁকে চট করে পেয়ারাগাছের কথা মনে পড়ে গেল। ছোটবেলায় যখন বৃষ্টির দিনে পেয়ারাগাছে উঠে বসে থাকতাম, তখন এমনই একটা গন্ধ পেতাম নাকে। তাতে কত চেনা স্মৃতি মিশে আছে আমার! ছবিতে যেমন দেখেছিলাম, অবিকল সে রকম দেখতে। সেই চোখ, সেই ভ্রু, সেই নাক। আর সেই আঁকাবাঁকা মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত একই।
বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। কী বলব সেটা মনে মনে সাজানোর চেষ্টা করছি। মাথার ভেতর নদীর স্রোতের মতো হাজার হাজার শব্দ কোথা থেকে উড়ে এসে জানি উঁকি দিচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কই আপনি?’ এর পরপরই এই ঘটনা। কোনটা রেখে কোনটা বলি। হঠাৎ তাল হারিয়ে ফেললাম। বললাম, ‘শ্রাবণী?’
‘হুম্। চিনতে কষ্ট হচ্ছে আপনার? ছবির সঙ্গে কোনো ফারাক আছে নাকি? থাকলে বলেন।’ কেমন ফটফট করে বলে গেল সে। হালকা বাতাসে তার চুলগুলো মৃদু মৃদু উড়ছে। জিহ্বা দিয়ে সে পাতলা ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিল।
‘না না, তা হবে কেন? বসো।’ পাশে জায়গা করে দিয়ে বসে পড়লাম। সেও বসল, তবে খানিকটা তফাতে। একটা নীল রঙের জামার সঙ্গে সাদা ওড়না পরেছে। মাথায় গোলাপি রঙের হেয়ারব্যান্ড। ফরসা মুখটাতে যেন দিনের সূর্য প্রতিফলিত হয়ে ফেরত যাচ্ছে দূরে, গালে এমন একটা ঝিলিক দেখতে পেলাম। মুগ্ধ নয়নে তার পানে একবার তাকিয়ে মাটিতে মুখ করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভালো আছ?’
বুকে কেমন একটা দুরুদুরু ভয় কাজ করছিল, যার জন্য সহজ হতে পারছিলাম না। বহু মেয়ের সঙ্গে আগে তো প্রথম দেখাতেই অনেক কথা বলেছি। কই, তখন তো এমন হয়নি। আর এখন যার সঙ্গে আলাপের তিন মাস হয়ে গেছে, তেমন একজনের সঙ্গে কথা বলতে সংকোচবোধ হচ্ছে আমার। নিজের প্রতি ধিক্কার চলে এলো। পিঠ সোজা করে বসলাম। আচমকা সারা শরীরে পিঁপড়ার কামড়ের মতো জ্বালা শুরু হলো। জল না পেয়ে কয়েক দিনের তৃষ্ণার্ত চামড়াটা বিদ্রোহ করার পাঁয়তারা করেছে বোধ হয়। রৌদ্র-অ্যালার্জিটা এই জাগল বলে!
প্রশ্নটা শোনার পর উত্তর না দিয়ে শ্রাবণী বলল, ‘তার আগে মাথাটা এদিকে দেন আপনার, গুনে গুনে চারটা চুল ছিঁড়ি। তারপর যা বলার বলবেন।’
‘চুল ছিঁড়বে মানে?’ চমকে উঠলাম। তা-ও আবার চারটা? মুখটা হাঁ হয়ে গেছে। বলে কী মেয়েটা? মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি! মনে মনে ভাবলাম।
আমার এমন ভাব দেখেই কিনা কে জানে, শ্রাবণী চোখ দুটো গোল গোল করে বলল, ‘এত সহজেই ভুলে গেছেন। দুই দিন পর তো আমাকেও মনে থাকবে না।’ তারপর মুখটা গোমড়া করে চুপ মেরে গেল। কপট একটা অনুভূতি খেলা করছে তার পটলচেরা চোখ দুটোতে।
ঘটনার শুরু আজ থেকে তিন মাস আগে। দুপুরবেলার এক অবসরে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম কিছুদিন আগে কেনা পুরনো স্মার্টফোনে। হঠাৎ সাজেস্ট ফ্রেন্ডে একজোড়া চোখ দেখে থমকে গেলাম। এর আগে এমন চোখ যে দেখিনি, তা নয়। যাদের দেখেছি, তারা সবাই কারো না কারো সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই শঙ্কাটা মনে ছিল, তবু অজানা এক আগ্রহে তার আইডিতে উঁকি দিলাম। আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী। এ বছর ভর্তি হয়েছে। কী সুন্দর মুখ তার! দেখে মনে হয়, এই বুঝি দুধ দিয়ে ধুয়ে দিয়েছে কেউ। এমন কাঁচা রং। ওর চোখ দুটো স্বাভাবিকের চেয়ে বড়। এত বড় চোখের মায়াতে পড়েই গেলাম শেষ পর্যন্ত। দোলাচলে দুলতে দুলতে কপালে যা আছে বলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দিলাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম।
আনুমানিক দুই ঘণ্টা পর যখন আবার ফেসবুকে ঢুকলাম, তখন দেখলাম অ্যাকসেপ্ট করার নোটিফিকেশনটা চলে এসেছে। মনটা খুশিতে নেচে উঠল। আর দেরি না করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মেসেজে নক করলাম। উত্তরও পেলাম কিছুক্ষণ পর। এমনি করেই আলাপচারিতা চলতে লাগল আমাদের। অনেক বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। প্রসঙ্গটা ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত বিষয়ের দিকে গড়িয়ে গেল। স্বীকার করতে দোষ নেই, তাতে পরোক্ষ ভূমিকাটা একতরফা আমারই ছিল। তখন দেখি ও মেসেজ দেখেও উত্তর দিতে খানিকটা সময় নিতে শুরু করল। ভাবলাম, এই বুঝি ফসকে গেল অল্পের জন্য। প্রবলভাবে হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে উঠলাম। একপর্যায়ে লজ্জার মাথা খেয়ে জানতে চাইলাম ওর বয়ফ্রেন্ডের পোস্টটা খালি আছে কি না। সে তো হেসেই খুন। বলল, এমনভাবে কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেনি। তাই উত্তরও তার জানা নেই এবং প্রেম নিয়ে সে সিরিয়াস নয়। তবে হাবভাবে যা বুঝলাম তাতে মনের সবুজ বাতিটা না জ্বেলে পারল না। এবার তাকে বললাম, দরখাস্ত দিতে হলে হাতে লিখে দিতে হবে, না টাইপ করতে হবে? সে কোনো উত্তর করল না। সেদিনের মতো সে উধাও হয়ে গেল। কয়েক দিন কোনো খোঁজ ছিল না তার। গুম হয়ে যাওয়া বলতে যা বোঝায়, একেবারে আক্ষরিক অর্থে তা-ই। এর মাঝে আমি তাকে যে মেসেজ করিনি, তা নয়। উত্তর না পেয়েও বার্তার পর বার্তা দিয়ে গেছি এই ভেবে যে যদি কখনো সংকেত আসে। যদি একবার মুখ তুলে চায় ভাগ্যদেবতা। অবশেষে সেই দিনটির সাক্ষাৎ পেলাম। আকস্মিকভাবেই পেলাম। ঘড়ির কাঁটায় তিনটা বাজবে বাজবে করেও বাজছে না। এমন সময় একটা কল এলো ফোনে। শুয়ে ছিলাম, তাই চোখ বন্ধ করেই রিসিভ করি। তখন চিকন একটা কণ্ঠস্বর বলে উঠল—‘হ্যালো, শিহাব বলছেন?’
‘হ্যাঁ, বলছি।’ গলার মধ্যে হঠাৎ নারীকণ্ঠ শোনার মতো একটা আশ্চর্য ভাব ফুটে উঠেছে।
‘চিনতে পারছেন আমাকে?’ আরে, আজব তো! নিজে ফোন দিয়ে আমাকেই বলে কিনা তাকে চিনতে পারছি কিনা। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নম্বরটা দেখে নিলাম। না, এ নম্বর আমার অপরিচিত। তবু স্বীকার করলাম না। চিন্তা করার জন্য কিছুটা সময় নিলাম। এই কয়েক দিনে কাকে কাকে নম্বর দিয়েছি মনে করার চেষ্টা করছি। তবু কিছু কিনারা করতে পারলাম না।
‘চিনতে পারলেন না তো? জানতাম চিনবেন না।’ ওপাশ থেকে বলা হলো।
‘কে? সন্ন্যাসী?’ কণ্ঠে সন্দেহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
হাসছে কণ্ঠটা। ‘হুম্, আমি। চিনলেন কিভাবে?’
‘বুঝতে হবে। চিন্তা করে বের করবেন।’
অত চিন্তা করার সময় নেই। তার পরের মিনিট পনেরো তুমুল আগ্রহে অনেক কথাই সে বলল। তার পরিবারের কথা, পছন্দের গানের কথা, ভালো লাগা রঙের গল্প—আরো কত কী! কথাগুলো শুনতে বেশ লাগছিল, তাই শুধু শ্রোতার ভূমিকা পালন করে গেছি আমি। শেষে বলল, ‘আমার এক আত্মীয় ফোন দিয়েছে, আপনাকে রাতে ফোন দেব কেমন।’ বলেই আকস্মিকভাবে ফোনটা রেখে দিল। খুব ভালো লাগছিল তখন। মনে হলো, যেন কত অমূল্য কিছু পেয়ে গেছি আমি। সত্যিই আমি পেয়েছিলামও। সেদিন থেকে টানা তিন মাস আমাদের কথা চলছিল। মান-অভিমানও কম হয়নি। আবার মিটেও গেছে। এর মধ্যে হৃদয়ের কত আবেগ দেওয়া-নেওয়া হয়ে গেছে একটু একটু করে। ধীরে ধীরে আরো গাঢ় হয়েছে আমাদের প্রেম। একদিন কথা না বললে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগত বুকটা। আজ সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে—বিশ্বাসই হতে চায় না সেটা।
‘চুল ছিঁড়বে ঠিক আছে, তবে চারটাই কেন? তার কম বা বেশি কেন নয়?’ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি।
সে মুখ তুলে তাকায়। তার দৃষ্টিতে কেমন একটা কালো পতাকা শূন্যতা নিয়ে মিছিলে নামল। বলল, ‘কারণ আছে। শুনবেনই তাহলে?’ তারপর বড় করে একটা দম নিল। দমের সঙ্গে সঙ্গে সাহসও নিল বুঝি কিছু।
‘মনে আছে, ফোনে একদিন রাগী গলায় কথা বলেছিলেন আমার সঙ্গে। সেটা শুনে সারা রাত খুব কেঁদেছিলাম আমি। রাতের খাবারটাও খাইনি দুঃখে। কাঁদার জন্য একটা, আরেকটা খাবার না খেতে দেওয়ার জন্য।’
‘মোটে তো দুটো হলো। আর বাকি দুটো? সেটার কারণও শুনি।’ কৌতুক মনে করে মুচকি মুচকি হাসছি। আমার চোখ থেকে তার চোখ নামিয়ে নিল সে। মাথা নিচু করে আছে।
‘কী হলো, বলবেন না?’ আমি তাগাদা দিলাম।
হঠাৎ দেখি, তার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে গেলাম। কী করব ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে কি আনমনে তাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি?
কিছুক্ষণ পর ও মুখ তুলল। কান্নায় চোখ জোড়া সিঁদুরের মতো লাল হয়ে গেছে। সত্য বলবে বলে হয়তো চোখে চোখ রাখে শ্রাবণী। তারপর নাক টেনে শক্ত গলায় বলল, ‘আমি শ্রাবণী নই। ওর যমজ বোন। আমার নাম লাবণী। আমাদের সব কিছু এক, কেবল কপালের কাছের এই দাগটা ছাড়া।’ ঘোরের মধ্যে সে আঙুল দিয়ে তার কপালের দাগ দেখাল। ‘কলেজে পড়ার সময় বাথরুমে পড়ে এটা হয়েছে আমার।’
‘তাহলে শ্রাবণী কোথায়?’
‘শ্রাবণী মারা গেছে।’ বলেই সে উঠে দাঁড়াল।
‘মানে কী?’ আমিও উঠলাম। কথাটা শুনে মনে হলো, নিঃসঙ্গ কোনো বেনামি গ্রহের আকাশ ফুঁড়ে ধপ করে মাটিতে আছড়ে পড়লাম। হাড়গোড় সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে দলা পাকিয়ে গেছে। এটা কী শুনছি আমি! সৃষ্টিকর্তা কেন আমাকে এমন কষ্ট দিল। পাথরের মতো নিঃশব্দে অশ্রু ঝরতে লাগল দুই চোখ ভেঙে। ভেতরের সাগরটিতে বুঝি জোয়ার এসেছে খুব।
‘আজ থেকে এক মাস আগে আত্মহত্যা করেছে ও। বিশ্বাস করুন, আপনাকে ও ঠকাতে চায়নি।’
‘তবে আত্মহত্যা করল কেন?’ বাচ্চাদের মতো শব্দ করে ফুঁপিয়ে উঠলাম। বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে আমার। চন্দ্রাহতের মতো একের পর এক চাপড় মারছি বুকে।
লাবণী বলল, ‘বেশ কয়েক দিন ধরেই ওর বিয়ের কথা চলছিল। হঠাৎ এক পাত্রপক্ষ এসে পছন্দ করে সেই রাতেই বিয়ে করে নিয়ে গেল ওকে। তার পরের দিন বিকেলে তার লাশ পাওয়া যায় ঘরের তীরের সঙ্গে লটকানো অবস্থায়। এই কয়েক দিন ওর হয়ে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলেছি। পারলে আমাকে মাফ করে দিয়েন।’
তারপর সে আর কী বলেছে, সেটা কানে পৌঁছেনি। কোনো কিছু ভাবার মতো সময় ছিল না হাতে। টুকরো টুকরো করে গড়া এত দিনের স্বপ্নের পৃথিবীটা আমার চোখের অগোচরেই ভেঙে গেল। এমনই দুর্ভাগ্য আমার, টেরও পেলাম না। হঠাৎ পাগলের মতো এক ভোঁ-দৌড় দিলাম। কোথায় যাব, তা জানি না। শুধু এটুকু জানি, আমাকে দৌড়াতে হবে। দৌড়াতে হবে অনন্তকালের দৌড়।
=========================
রানবীর : আচ্ছা, দাদা-দাদুকে আমাদের হার মানাতে হবে, বুঝেছ?
মীম : কিভাবে হার মানাতে হবে? আর হার মানাতে হবে কেন?
রানবীর : আমাদের দুজনের মধ্যে যে ভালোবাসা, সেটা যে দাদা-দাদুর চেয়ে অনেক গুণ বেশি, সেটা বোঝাতে হবে।
মীম : কিভাবে বোঝাব?
রানবীর : দাদা-দাদুর ছেলে-মেয়ে কয়জন?
মীম : ১০ জন।
রানবীর : আমাদের বাবু হবে ২০টা। তাহলে আমাদের মাঝের ভালোবাসা যে দাদা-দাদুর চেয়ে বেশি, সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।
মীম : আমাকে মেরে তোমার ভালোবাসা প্রমাণ করার বুদ্ধি, তাই না?
রানবীর : কী বলো, তোমাকে মারার বুদ্ধি মানে?
মীম : ২০টা বাচ্চা কি তোমার পেটে হবে নাকি আমার? আমি বাবা দুইটার বেশি বাবু নিতে পারব না।
রানবীর : মাত্র দুইটা?
মীম : হ্যাঁ গো, হ্যাঁ। ২০টা বাচ্চা দিয়ে তুমি কী করবা, যদি আমি বেঁচে না থাকি?
রানবীর : তুমি বাঁচবে না কেন?
মীম : ২০টা বাচ্চা হতে তো তোমার কিছু করা লাগবে না। তোমার দরকার খালি ২০টা রাত, ওদিকে আমার তো ২০টা বছর। বাব্বা, আমার চিন্তা করতেও ভয় লাগছে।
রানবীর : দাদু পারলে তুমি পারবা না কেন?
মীম : দাদু পারছে, কারণ দাদুদের সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণের কিছু ছিল না। দাদার সঙ্গে মজার খেলা খেলতে খেলতে ১০ বার মা হয়েছে। সে আজকের দিন জন্মালে দুইটার বেশি বাবু নিতই না।
রানবীর : আচ্ছা, আমরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কী ব্যবহার করব?
মীম : ছিঃ। এসব কথা বিয়ের পর বলবা, এখন এসব বললে একদম নাক ভেঙে দিব।
রানবীর : তাই, আমার নাক ভেঙে দিলে আমি তোমার শরীরের ঘ্রাণ নিব কী করে?
মীম : হয়েছে হয়েছে, আর ঢং করতে হবে না। সারা দিন বলে আমি ঢং করি, অথচ নিজে ঢং করার বেলায় কম যায় না। আমি এখন ঘুমাব।
রানবীর : একা একা ঘুমাতে ইচ্ছা করে না আর।
মীম : আবার শুরু করছ? চুপচাপ ঘুমাও। আমি রাখলাম।
ফোনটা সত্যি সত্যি রেখে দিল মীম। কিন্তু মীম জানে, রানবীরের ঘুম আসবে না। প্রতি রাতে মোবাইলে চুমু না দিলে এই বদ ছেলেটার ঘুম আসে না। তাই কিছুক্ষণ পর আবার কল দিল মীম। রিংটা না হতেই ওপাশ থেকে—
রানবীর : হ্যালো মীম, বেবি, আই মিস ইউ।
মীম : শুনো, আমি পুয়ারা করতে ফোন দেই নাই। তোমার ঘুমের ওষুধটা নাও, আর ঘুমাও। মুউউউয়া। বাই, গুড নাইট।
ফোন কেটে দিল মীম। এবার পাগলটা ঘুমাবে। সকালে দিব্যি বিছানায় পড়ে থাকবে, যতক্ষণ না মীম কল করে জাগাবে। সকালে ক্লাস আছে, এই ভাবতেই ঘুমে চোখ ছোট হয়ে এলো।
ওয়াশরুম থেকে এসেই লাইফ করে ঘুমিয়ে পড়ল। মোবাইলের লাইটটা জ্বলে উঠল। মীম বুঝতে পারছে পাগলটা গুড নাইট আর আই লাভ ইউ লিখে টেক্সট করেছে। এটা পাগলটার অভ্যাস। রিপ্লাই না দিয়েই ঘুমিয়ে পড়ল মীম।
মীম আর রানবীর একে অন্যের কাজিন। তাদের বাবারা দুজন আপন ভাই। কিন্তু ভাই হলেও দুজনের মধ্যে সম্পর্ক খুবই খারাপ। অথচ মীম আর রানবীর কাউকে ছাড়া কেউ বাঁচতে পারবে না হয়তো। তাদের প্রেমটা শুরু হয় দুজনের বন্ধুত্ব থেকেই। পরিবারের দূরত্বটা কমাতেই মূলত তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করা শুরু হয়। একপর্যায়ে নিজেদের মধ্যে অনেক বোঝাপড়া হয়ে যায় এবং মনের অনেক মিল থেকেই তারা নিজেদের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করে। একদিন মীমকে ফেসবুকেই অফার করে রানবীর। মীম প্রথমে রাজি হয়নি। কিন্তু রানবীরের রিজেক্ট হওয়া চেহারা মীম মানতে পারেনি। শেভ না করে করে মুখভর্তি দাড়ি, চুল না কেটে কেমন জানি এবড়োখেবড়ো চেহারা বানিয়ে ফেলেছে। ভার্সিটি পর্যন্ত মিস করা শুরু করে দিয়েছে। যেখানে দুই পরিবারের সম্পর্ক ভালো করার মিশনে নামছে মীম, সেখানে তাদের দুজনের সম্পর্কই খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে মীম সাড়া দিল। এক দিনে অমানুষ থেকে মানুষ বানিয়ে, কাজিন থেকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে রানবীরকে নিজের করে নিল মীম।
কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, মীমের মনে ততই ভয় জন্মাচ্ছে; কেননা তার বিয়ের জন্য বাসায় কথাবার্তা চলছে। অন্যদিকে মীম আর রানবীর এখনো চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে, যেখানে বিয়ে নিয়ে তাদের কোনো প্ল্যান নেই। কিন্তু মীম আজকাল রানবীরকে বিয়ের ব্যাপারে দুই পরিবারকে রাজি করানোর জন্য খুব প্রেসার দিচ্ছে। রানবীর যেহেতু এখনো ছাত্র, তাই বিয়ে করার মতো সামর্থ্য তার নেই বলে সে কোনো উত্তর দিতে পারছে না। এ কারণে মীম অনেক রাগ হয়ে থাকে রানবীরের ওপর। কিন্তু রানবীর মীমকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না।
অতঃপর একদিন মীমকে দেখার জন্য বাসায় ছেলেপক্ষের লোক এলো। রানবীর মীমের হবু বরের সামনে সোফায় বসে বারবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর মীম আসার জন্য অপেক্ষা করছে। বাসার যেহেতু কেউই রানবীর-মীমের সম্পর্ক নিয়ে কিছু জানে না, তাই মীমকে দেখতে আসার অনুষ্ঠানে রানবীরের উপস্থিতি কারো চোখে কোনো সমস্যা না। কিন্তু রানবীর কেবল মীমকে একনজর দেখার জন্যই বেহায়ার মতো চলে আসছে। তা ছাড়া গত এক সপ্তাহে মীমকে দেখতে আসবে বলে মীম রাগ করে রানবীরের সামনে আসেনি। রানবীরও ‘কাপুরুষ’ শব্দটা মীমের কাছ থেকে ভালোভাবে নিতে পারেনি, তাই রানবীরও রাগ করে দেখা করেনি। কিন্তু আজ আর মন মানছে না।
লাল শাড়ির পরিবর্তে হলুদ একটা শাড়ি পরে মীম সবার সামনে এসেছে। মীমকে বসতে দিয়ে নিজের আসন ছেড়ে হবু বরের পেছনে দেয়ালের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মীম এতক্ষণে বুঝতে পারছে, রানবীর তাকে দেখতে আসছে। মীমকে যতবারই মাথা তুলে মুখটা দেখাতে বলছে তার হবু শাশুড়ি, মীম ততবারই রানবীরকে দেখতে পাচ্ছে। আর বুঝতে পারছে রানবীরের চোখে জল জমে আছে, শুধু চোখের পাতাটা নামালেই জল নেমে আসবে গালে।
মীমের গাল বেয়ে এবার চোখের পানি পড়ছে, এটা দেখে অনেকেই অবাক হলো। মীমের হবু শ্বশুর তো বলেই ফেলল— ‘মা, আজ তো আমরা কেবল দেখতে আসলাম, তুমি কাঁদছ কেন?’
উত্তর না দিয়েই সবাইকে অবাক করে দিয়ে মীম বসা থেকে উঠে দাঁড়াল এবং হবু বরের পেছনে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো রানবীরের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। মীমের এমন কাণ্ড দেখে রানবীর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সবার দিকে একবার তাকিয়ে মীমের দিকে তাকাল। সবাই হিন্দি সিরিয়ালের মতো এক এক করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দুজনের দিকে তাকাল। মীমও মনে হয় সবাই তাকানোর জন্য অপেক্ষা করছিল। সবাই যখন এক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকাল, ঠিক তখনই মীম রানবীরের ঘাড়ের পেছনে দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে তার দুই ঠোঁট শক্ত করে কামড়ে ধরল।
গত সপ্তাহেই দুজনের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো, আজ তারা দুজনে বিয়ের পিঁড়িতে। মীমকে দেখতে আসার ওই দিনে তার সেই সাহসিক কাজ শুধু তাদের দুজনের জীবনে সুখ বয়ে আনেনি, তাদের দুই পরিবারের কোন্দলেরও অবসান ঘটিয়েছে। অন্তত এই কারণে মীমের প্রতি দুই পরিবার কৃতজ্ঞ। আর রানবীরের কাছে তো মীম আজীবনই রানি আর নিজে মীমের কাছে কাপুরুষ। যদিও মীম এখন আর কাপুরুষ বলে না, কারণ ওই দিন রানবীর মীমের কাছে আসতে পারার সাহসই যে তাকে সাহসী করে তুলেছে, তা কেউ না জানলেও মীম নিজে তো জানে।
Monday, April 23, 2018
Subscribe to:
Posts (Atom)